
প্রকাশিত: Sun, May 7, 2023 6:21 PM আপডেট: Tue, Jun 24, 2025 10:08 AM
‘চিফ হিট অফিসার’ বুশরার সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জসমূহ
কাজী এম মুর্শেদ : ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তরের মেয়র আতিকুল ইসলামের কন্যা বুশরা আফরিন ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন। অনেকের অনেক প্রতিক্রিয়া দেখলাম, কারও ক্রীড়ার ইচ্ছা দেখলাম। অনেকে সন্দেহ করেন, এটা মেয়রের ক্ষমতার অপব্যবহার, কারও কথা টাকাপয়সা নিয়ে, কারও নিয়োগ প্রক্রিয়া নিয়ে। সিটি করপোরেশনে কর্মরত কিনা, বেতন কতো তুলবে, জনগণ কেন দেবেÑ এসব নিয়ে অনেক প্রশ্ন। প্রশ্ন থাকা অস্বাভাবিক না। কারণ এমন ধরনের কোনো পোস্ট আছে বলে কেউ জানতো না। পত্রিকাও বিভিন্ন ব্যাখ্যা দিয়ে এটা অত্যন্ত স্বচ্ছ প্রক্রিয়া এবং নিয়োগ বিদেশ থেকে হওয়া বলে চালালো। বেতন ভাতা সব বাইরে থেকে আসবে। বুশরার প্রোফাইল ঘেটে পরিবেশ সংক্রান্ত কি অভিজ্ঞতা সেসব বের করলো। চুপ থাকলে ‘টাইম ইজ দ্য গ্রেট হিলার’ প্রযোজ্য হয় না। তার জন্য ব্যাখ্যা দিতে হয়। এটাও জানি ব্যাখ্যা মেয়র সাহেব দিতে পারবেন, কিন্তু একটা জায়গায় আটকে যাবেন। উনি এজন্য কথা বলছেন না। বিশ্বের বিভিন্ন শহরে এই পদ আছে, তাদের নির্দিষ্ট শর্টটার্ম লংটার্ম গোল বলা আছে, জব ডেসক্রিপশনও নির্দিষ্ট করা আছে। এর নিয়োগ দেওয়া হয় আর্শট-রক ফাউন্ডেশন থেকে।
ব্যাখ্যা করলে বুঝবেন। গ্রীন হাউস ইফেক্টের জন্য বিশ্বের উষ্ণতা বাড়ছে। এতে আর্কটিক এবং এন্টার্কটিক এর বরফ গলে সাগরের পানির উচ্চতা বাড়ছে। সমূহ বিপদে যে দেশ আছে তার মধ্যে মালদীভস, বাংলাদেশ শুরুর দিকে। মালদীভসের উপর একটা লেখা ছিলো, কীভাবে তারা ১৯৯৫ থেকে কাজ করে পুরে দ্বীপের সঙ্গে নতুন দ্বীপ তৈরি করে ১৫ মিটার উচ্চতা বাড়িয়েছে, ব্যাখ্যা করেছিলাম। বাংলাদেশ কিছু করেনি, বরং পরিবেশ নষ্ট করার মতো কিছু প্রজেক্ট নিয়ে গর্বিত। তবে হাত পাতা বন্ধ হয়নি, পয়সাও আসছে, সেই পয়সা কোথায় কীভাবে খরচ হয় তার কোনো হিসাব কেউ জানি না।
যেসব শহর মনে করে তাপমাত্রা বাড়বার জন্য তাদের ক্ষতি হতে পারে, তারা আর্শট-রক ফাউন্ডেশনের কাছে আর্জি জানায়। এরা তখন একটা পদ তৈরি করা আছে, সেই পদে কাকে নিলে কাজ হবে জানতে চায়। নাম পাঠানোর পর তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। এই চিফ হিট অফিসারের বেতন ভাতা এবং নিয়োগ সবই আর্শট-রক করে, তবে নিয়োগের নাম পাঠানোর প্রক্রিয়া কোনো স্বচ্ছতার মধ্যে না, এটা সেই শহরের মেয়র যাকে মনোনিত করে।
মেয়র আতিক সাহেব এখানে একটা ছোট ভুল করে বসেছেন। উনি যদি একটা বিজ্ঞপ্তি দিতেন, যার উপর যাচাই করে তিনজনকে শর্টলিস্ট করে নাম পাঠাতেন, তাতে নিজ কন্যাকে এক নম্বরে রাখলেও কোনো প্রশ্ন উঠতো না। উনি স্রেফ শর্টকাট ধরতে গিয়ে নিজে প্রশ্নের মুখে, কন্যাকে প্রশ্নের মুখে, সরকারি দল এবং কর্মীদের সেইসঙ্গে মেয়র অফিসকে প্রশ্নের মুখে ফেলেছেন। উনার আশেপাশে বড় বড় ব্যক্তি দেখি যাঁদের গান শোনান, গানবাংলা তাপসের মতো লোকজনও ঘোরে। কেউ উনাকে এই চিপা বুদ্ধিটা দিতে পারলো না? আমাদের দেশে সবসময় অস্বচ্ছভাবে স্বচ্ছতা বানানোর কাজ চলে, এমন কঠিন কিছু ছিলো না।
বুশরা আফরিনের যোগ্যতা হলো উনি মেয়র কন্যা। বিদেশ থেকে ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ করে এসেছেন। উনি সম্ভবত একটা চাকরিও করেছিলেন শক্তি ফাউন্ডেশনে, এরপর পিতার ব্যবসায় প্রোডাকশন ডিজাইনার ও সমাজকল্যাণ দেখেন। সেখানে ফ্লোরের তাপমাত্রা কমানোর কিছু কাজ করেছেন, যদিও কি কাজ জানা নেই। যেটা জানা তা হলো ব্রেস্ট ফিডিং জোন এবং ডে কেয়ার সেন্টার করা। সঙ্গে পশুপ্রেমী হিসাবে নাম আছে। এর বাইরে আপাতত জানি না, তবে অন্যান্য দেশে যারা চিফ হিট অফিসার আছেন, তাদের প্রোফাইলের সঙ্গে তুলনা করলে তেমন কিছুই না। হয়তো দেশেও কাউকে নিয়োগ দেবার মতো নেই, আমি সৈয়দা রেজওয়ানা ছাড়া তেমন কাউকে দেখি না। তবে বিদেশে পরিবেশ বিশেষজ্ঞ পাওয়া যাবে, ভালো বেতন হলে চলেও আসতো।
ব্যক্তি বুশরা আফরিন নিয়ে কিছু বলার নেই, হয়তো খারাপ করবে না। আর যেহেতু শর্টটার্ম ও লংটার্ম গোল আছে যা ফাউন্ডেশন ঠিক করে দেয়, বয়সী কাউকে না নিয়ে তিরিশের ঘরে কাউকে নিলে লম্বা সময় কাজ করতে পারবে। সে হিসাবে বুশরা ঠিকই আছে, তারপরও যে ভুলটা মেয়র আতিকুল ইসলাম করে বসছেন, সামান্য ডিপ্লোমেটিক হলে এড়াতে পারতেন। আমরা যেটাকে আর্শট-রক বলছি, এর পুরো নাম এড্রিয়েন আর্শট রকফেলার এবং এক্ট্রিম হিট রেসিলিয়েন্স ফাউন্ডেশন। তাদের চিফ হিট অফিসারের কাজের পরিধি হলো, তাপমাত্রা বৃদ্ধির ক্ষতিকর দিক নিয়ে সচেতনতা বাড়ানো। সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত এলাকা চিহ্নিত করা। পরিকল্পনা তৈরি করা। সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। দীর্ঘমেয়াদের তাপমাত্রা কমানো ও ক্ষতি হ্রাস করার প্রকল্প নেওয়া।
এর মধ্যে দুইটা বিষয় খুবই জরুরি, বিভিন্ন স্টেকহোল্ডারদের নিয়ে একসঙ্গে কাজ করা। এক্ষেত্রে মেয়র কন্যা তার পিতার নাম ব্যবহার করতে পারেন। তবে শেষ কাজ যেটা বিভিন্ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করা, আমাদের কোনো সংগঠন স্বচ্ছ না, জবাবদিহিতাও নেই। যেখানে ২০/৫০ হাজার ডলার বাফুফে স্বচ্ছ টেন্ডার দেখিয়ে গায়েব করে দেয়, সেখানে এতো ধরনের রাজনৈতিক চাপ সামলে প্রজেক্ট করার যোগ্যতা আপাতত কন্যার মাঝে দেখি না। মেয়র সাহেব এই জিনিসটাই নিজের হাতে রাখতে চান।
মায়ামি, লস এঞ্জেলস এর মতো বড় শহরগুলো যেমন পরিবেশ বিশেষজ্ঞ নিয়োগ দিয়েছে, সেখানে ঢাকা উত্তরের এবং দক্ষিণের উচিত ছিলো সবার আগে এগিয়ে আসা। আমরা যেহেতু প্রথম কাতারে তাপমাত্রা বৃদ্ধিতে ক্ষতিগ্রস্ত হবো, এশিয়ার মধ্যে প্রথম না হয়ে বিশ্বে প্রথম হওয়া উচিত ছিলো এবং দক্ষ পরিবেশবিদ নেওয়া যিনি শুধু কুকুর বিড়াল বা বাচ্চাদের দেখাশোনায় সিদ্ধহস্ত এমন কাউকে না খোঁজা। দক্ষ মানুষ আছে যারা শহরের তাপমাত্রা, পরিবেশ দূষণ, রাস্তার ধারণ ক্ষমতা, জ্বালানির ব্যবহার, জলাধার সংরক্ষণের প্রয়োজনীয়তা, শহরে বনায়ন নীতিমালা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, ই-বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, খাবার পানির ব্যবস্থা, কারাখানা বর্জ্য নিয়ন্ত্রণ এসব ব্যাপারে পর্যাপ্ত জ্ঞান রাখেন, প্রয়োজনে পরিকল্পনা করতে পারবেন, বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি ইউনিটকে একসঙ্গে কাজ করাবেন এবং প্রকল্প যেন স্বচ্ছভাবে চলে সেটা দেখবেন। মেয়র সাহেব গান করেন, গান তেমন ভালো লাগে বলবো না, তবে এই পুরও ভালো পদক্ষেপটা কেন সামান্য মাথা খাটিয়ে করতে পারলেন না, জানি না। লেখক: অর্থনৈতিক পর্যবেক্ষক
আরও সংবাদ
চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে
‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!
কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!
সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি
ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
মতিউর প্রতিদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ৮৩ ব্যাচের বন্ধুদের গ্রুপে সৎ জীবন যাপনের উপদেশ দিতেন!

চ্যাম্পিয়ন ভারত : একটা ছোট মুহূর্ত কতো বড় পার্থক্য গড়ে দিতে পারে

‘ওই ক্যাচ হয়নি, সুরিয়াকুমারকে আবার ক্যাচ ধরতে হবে’!

কতো দেশ, কতোবার কাপ জিতলো, আমাদের ঘরে আর কাপ এলো না!

সংগীতাচার্য বড়ে গোলাম আলি খান, পশ্চিমবঙ্গের গর্ব সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় ও আমি

ইন্ডিয়ান বুদ্ধিজীবী, ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্র ও দেশের বুদ্ধিজীবী-অ্যাক্টিভিস্ট
